বন্ধুরা আজকের প্রতিবেদনের আমাদের টপিক পেনি স্টক । যে পেনি স্টকের গল্প আমরা শুনি যে মাল্টিব্যাগার পেনি স্টকের 1 টাকা ইনভেস্ট করে কেউ 1 হাজার টাকা পেয়েছেন কিংবা 10 হাজার টাকা ইনভেস্ট করে লাখপতি কিংবা কোটিপতি হয়ে গেছে । সেই গল্পগুলো আসলে আসে যে খুব কম টাকা দিয়ে স্টকগুলোতে ইনভেস্ট করা হয়। এই পেনি স্টকে নাকি কেউ একজন খুব ভালো পেনি স্টক সিলেক্ট করেছিলেন সেখানে ইনভেস্ট করেছিলেন এবং দীর্ঘদিন বাদে গিয়ে, তিনি প্রচুর টাকা স্টক মার্কেট থেকে প্রফিট করেছে কিন্তু এটা কি আদৌ সত্যি? এতটাই কি সহজ এবং বাস্তবিকই এটা হয় নাকি। এই পেনি স্টক কি ইনভেস্ট করার সময়ে অনেক বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। আজকে আমাদের আলোচনা সেই বিষয় নিয়ে চলুন জেনে নিই।
পেনি স্টক কী?
2024 এর 18 ই মার্চের খবর আর সি আই নামক নন ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানিটি গত চার বছরে 875 পারসেন্ট রিটার্ন দিয়েছে ইনভেস্টারদের। 2020 এর মার্চে 4 টাকা থেকে শুরু করে বর্তমানে 2024 এ কোম্পানির শেয়ারের ট্রেড করছে 39 টাকায়।
আরও একটি উদাহরণ দিই। RBNL অর্থাৎ রেল বিকাশ নিগম লিমিটেডের স্টক। পাঁচ বছরে 1150% রিটার্ন দিয়েছে। 2019 এর মার্চে মাত্র 19 টাকা শেয়ারবাজারে যাত্রা শুরু করেকরে, এখন 2024 এ মোটামুটি শেয়ারটি 246 টাকার আশেপাশে ট্রেড করছে। দুটি উদাহরণ এর ক্ষেত্রে আমরা দেখলাম স্টকগুলি মাল্টিব্যাগার হয়েছে। খুব সামান্য দাম থেকে শুরু করে বিরাট অঙ্কের রিটার্ন মিলছে। স্টকগুলিতে। আপনারা যাঁরা শেয়ার বাজারে ইনভেস্ট করেন, তাঁরা জানেন, এই খুব সামান্য দামে স্টকগুলির একটি বিশেষ নাম আছে। এগুলোকে পেনি স্টক বলে, কেন এই স্টকগুলো নাম পেনি স্টক। কোন বৈশিষ্ট্য গুলো দেখলে বোঝা যাবে স্টকগুলি আসলে পেনি স্টক।
পেনি স্টক ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও এগুলো এত জনপ্রিয় কেন ইত্যাদি আরও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে থাকবে আজকের আলোচনা। পেনি কথাটির আক্ষরিক অর্থ খুব স্বল্প টাকার অঙ্ক। 1 পাউন্ড অর্থের 100 ভাগের এক ভাগকে 1পেনি বলে। যেহেতু এই স্টকগুলির দাম খুব কম হয় তাই এগুলোকে পেনি স্টকস বলে। সাধারণত 10 টাকার কম মার্কেট ভ্যালু যে সমস্ত স্টক রয়েছে। সেগুলি ভারতের শেয়ার বাজারে পেনি স্টক নামে পরিচিত।
পেনি স্টকে কী কী সমস্যা রয়েছে?
পেনি স্টক এর সব থেকে বড়ো সমস্যা ভোলাটিলিটি অর্থাৎ পেনি স্টকের দাম হু হু করে কখনো বৃদ্ধি পায়। আবার অনিয়ন্ত্রিত ভাবে কখনও কমে যায়। সেই সমস্যাটা কী ?সেটা আমরা এবার একটু জানবো।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্টার্ট আপ কোম্পানিগুলি পেনি স্টক ইস্যু করে। আর এদের মার্কেট ক্যাপ ও কম হয়৷ পেনি স্টক গুলো কি এদের Liquidity জন্য নন Liquid Stock ও বলা হয়।
অনিয়মিত লেনদেনের কারণে পেনি স্টকের দাম হঠাৎ করে কমতে বাড়তে পারে। আর এটাই এই স্টকে সবচেয়ে বড় নেতিবাচক দিক। পেনি স্টক অত্যন্ত ভোলাটিলিটি যেহেতু পেনি স্টক যে কোম্পানিগুলি ইস্যু করে তাদের স্টেবিলিটি খুব একটা থাকে না। আর তারা মূলত কম মার্কেট ক্যাপ যুক্ত কম্পানি হয়। তাই এরকম স্টকে বিনিয়োগ কিন্তু বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।
তবে শুধুমাত্র ভোলাটিলিটি না, পেনি স্টকের আরও অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেগুলো দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন সেটা পেনি স্টক না প্রথমত। দ্বিতীয়ত এই বৈশিষ্ট্যগুলি কিন্তু পেনি স্টকের সমস্যাও হতে পারে।
কিভাবে বুঝবেন স্টকটি পেনি স্টক ।
Penny Stocker ট্রেডিং ভলিউম কম অর্থাৎ নিয়মিত ট্রেডিং হয় না। স্টকগুলির পারফরম্যান্সের কোনও নিশ্চয়তা নেই, দাম খুব কম হয়, কোম্পানির মার্কেট ক্যাপ কম হয়। স্টকের দাম প্রচুর ওঠানামা দেখা যায়, ঝুঁকি অনেক বেশি। আর পেনি কেমন ফলাফল করবে তা বেশিরভাগ সময়ই অনুমানের উপর নির্ভর করে। তাহলে এত ঝুঁকি অনিশ্চয়তা থাকার পরও বিনিয়োগকারীদের ঝোক Penny Stock এর প্রতি এত বেশি কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ । দেখবেন যাঁরা শেয়ার বাজারে দীর্ঘ সময় ধরে ইনভেস্ট করে আসছেন বা মার্কেট সম্পর্কে, কোম্পানি সম্পর্কে রিসার্চ করে বিনিয়োগ করেন, তাঁদের খুব বেশি আগ্রহ থাকে না পেনি স্টকের প্রতি। তবে কারা এরকম স্টক কিনতে বেশি আগ্রহী। মূলত নতুন বিনিয়োগকারীদের কাছে পেনি স্টক একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ। কারণ প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন পড়ে না। ফলে যাঁরা শেয়ার বাজারে নতুন প্রবেশ করেছেন, তাঁরা মনে করেন পেনি স্টকে বিনিয়োগ করা সুবিধাজনক হবে। এর কারণ খুব সহজ৷ একজন নতুন বিনিয়োগকারী খুব সীমিত অর্থ নিয়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ শুরু করেন।
এবার ধরুন একজন বিনিয়োগকারী যার কাছে বিনিয়োগ করার জন্য 5000 টাকা রয়েছে। তিনি যদি 1 টাকা মূল্যের পেনি স্টকে পুরো টাকা ইনভেস্ট করেন তাহলে তিনি 5000 টি শেয়ার পাবেন। উল্টো দিকে ওই বিনিয়োগকারী যদি স্টেবল কোম্পানির শেয়ার কিনতে যার দাম প্রতি শেয়ারে 1000 টাকা, তাহলে তিনি মাত্র পাঁচটি শেয়ার পেতেন। ফলতঃ পেনি স্টক সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীরাই প্রাইস ভ্যালুর এই তফাতটা বুঝতে পারে না। অনেকের ধারনা বর্তমানে দাম কম থাকলেও ভবিষ্যতে দাম বেড়ে বিশাল রিটার্ন দিতে সক্ষম হবে এই স্টকগুলো। তবে সব ক্ষেত্রেই কিন্তু এই ধারণা ঠিক হয় না।
দেখুন এখানে আমি একটা কথা আপনাদের কে বোঝাতে চাই যে আমরা যখনই কোনও স্টক বৃদ্ধি করি তখন আমরা কিন্তু অ্যাকচুয়ালি পার্সেন্টেজ হিসেবে বৃদ্ধি করি। যেমন আমরা এখানে উদাহরণটা দেখলাম। ধরুন যে স্ট্যান্ডার্ড কোম্পানি রয়েছে তার স্টকটা যদি 1000 থেকে 2000 হয়ে যায় তাহলে কিন্তু আপনি 100% বৃদ্ধি করলেন টাকাটা। অর্থাৎ তখন কিন্তু আপনার 5000 টাকা ইনভেস্টমেন্ট বেড়ে 10,000 টাকা হয়ে গেল। এবার ধরুন পেনি স্টকও বাড়ছে। আপনি বললেন যে না পেনি স্টক
আমি নিলে একই টাকাতে অনেকগুলো শেয়ার পেয়ে যাব। ধরুণ, যে এক টাকা দামের পেনি স্টকে আপনি 5000 টাকা দিয়ে 5000 টি শেয়ার পেয়েছিলেন। সেই এক টাকার শেয়ার বেড়ে যদি 1 টাকা 50 পয়সা হয়।তাহলে আপনার কিন্তু ইনভেস্টমেন্টটা গিয়ে দাড়াবে 7500 টাকা হবে। অর্থাৎ এরকম না যে আপনার হাতে বেশি শেয়ার থাকা মানে আপনার বেশি টাকা বৃদ্ধি হচ্ছে।
আমরা অনেক সময়ই ভাবি না যে এটা হয়ত বাজারে আলু পটল কেনার মতো অর্থাৎ 10 টাকাতে যদি 10 টা পটল কেউ দেয় আর কেউ যদি 10 টাকাতে 5 টা পটল দেয় তাহলে আমি 10 টাকাতে 10 টা পটল দিচ্ছে তার কাছে যাব। শেয়ার বাজার টা আসলে ওরকম নয়।
আমি যদি 5000 টাকায় একটা ভালো কোয়ালিটি শেয়ার পাই, আমি যদি 5000 টাকায় একটা পেনি স্টক পায়, দু টোর ভ্যালুয়েশন কখনো এক নয়, যদিও বা আমার কাছে সংখ্যায় অনেক বেশি স্টক থাকুক না কেন।
Penny Stock এর সেরা প্লাটফর্ম
তবে স্টক নিয়ে যখন কথা বলছি তখন আপনাদের জানিয়ে রাখি যে, আপনারা এই স্টক নিয়ে যারা ট্রেডিং করতে চান পছন্দ তাঁদের জন্য পছন্দ Stock Market এসেছে ভারতবর্ষে৷ তার নাম হল Marketwolf । এখানে কিন্তু আপনি ডি ম্যাট অ্যাকাউন্ট ছাড়া এবং বিরাট কিছু টেকনিক্যাল জ্ঞান না থাকলেও ট্রেডি করতে পারবেন।
Penny Stocker সুবিধা
প্রথমত: পেনি স্টকের খবর বিভিন্ন সময় আমরা খুব আকর্ষণীয় ভাবে শুনতে পাই। কী সেই ব্যাপারটা একটু দেখুন৷।
দ্বিতীয়ত: আবার কিছু ইনভেস্টার ছোট কোম্পানি যাদের লং টার্মে গ্রোথ পোটেনশিয়াল আছে এমন জায়গায় বিনিয়োগের সুযোগ পান বলে পেনি স্টকে বিনিয়োগ করা সুবিধা জনক।
তৃতীয়ত: পেনি স্টক জনপ্রিয়তার সেটি হল এটি স্পেকুলেটিভ নেচার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পেনি স্টকের পারফরম্যান্স অনুমানের উপর নির্ভর করে।
চতুর্থত: পেনি স্টকের দামের গতিবিধি বেশ আনপ্রেডিক্টেবল হয়। সাধারণত এরা কোনও বাঁধাধরা টেকনিক্যাল অ্যানালিসিস মানে না। তাই নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি বেশ সুবিধা। যাঁরা বাজার সম্পর্কে বিশেষ রিসার্চ করতে জানেন না তাঁরা ও পেনি স্টক ইনভেস্টমেন্টকে ভাল বিকল্প মনে করতে পারেন।
Penny Stock এর বিনিয়োগের অসুবিধা
তবে যে কোনও বিনিয়োগের আগে আমাদের যেমন এই বিনিয়োগ সম্পর্কিত ঝুঁকিগুলি জানতে হয়৷ পেনি স্টকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও এর সম্ভাব্য কী কী ঝুঁকি থাকতে পারে সেগুলো জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
টাকা কতটা মাল্টিপ্লাই হল তার থেকেও কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ আমি মার্কেটে কত টাকা ইনভেস্ট করে সেটাকে আদতে বাঁচাতে পারলাম কিনা। সেইজন্য মার্কেটে যে কোনও ধরনের স্টকে ইনভেস্ট করার আগে যেটা সব থেকে বেশি জানা উচিত। সেটা হল ইনভেস্টমেন্টে আমার ঝুঁকি কতটা এবং আপনাদেরকে আমরা জানাব পেনি স্টকে আদতে ঝুঁকি কী রকম থাকে?
পেনি স্টক ঝুঁকিগুলি কী কী হতে পারে বাড়বে৷
Wid Bid Ask Price: Ask price Price এবং Bid Price মধ্যে বিশাল পার্থক্য। যেটাকে সাধারণত Wid Bid Ask Price ও বলা হয়।
এরকম ক্ষেত্রে বিক্রিত স্টক বেশি দামে বিক্রি করার চেষ্টা করেন। আর ক্রেতা কম দামের রেঞ্জ কিনতে চান। ফলেই কেনা ও বেচার দামের মধ্যে একটা গ্যাপ তৈরি হয়, আর এর জন্য ট্রেড করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
Low Liquidity : পেনি স্টক গুলো লিক্যুইডিটি বেশি হয় না। মানে সবসময় স্টকগুলোর জন্য ক্রেতা আপনি নাও পেতে পারেন। তাই একবার আপনি যদি এই স্টকটি কিনে ফেলেন তাহলে আপনি স্টকগুলো বিক্রি করা নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় পড়তে পারেন এবং সঠিক ক্রেতা না পেয়ে আপনার কি না স্টকগুলি অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে যেতে পারে।
Lack of Information : এই পেনি স্টক হল যে কোম্পানিগুলোর হয় তাঁদের সম্বন্ধে মার্কেটে তেমন কোনও তথ্য পাওয়া যায় না। যেমন আপনি স্টকগুলোর উপর কোনও রকম ইনভেস্টর্স প্রেজেন্টেশন নাও খুঁজে পেতে পারেন। ইনভেস্টর্স প্রেজেন্টেশন আসলে কোনও ব্যবসা সম্বন্ধে একটি পরিষ্কার সংক্ষিপ্ত অথচ তথ্যপূর্ণ ডকুমেন্ট এটিতে মার্কেট, অপরচুনিটিজ, প্রোডাকশন সার্ভিস সংক্রান্ত তথ্য, ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটাসের ব্যাপারে তথ্য ইত্যাদি লেখা থাকে। এই সমস্ত পেনি স্টক গুলো তে ইনভেস্ট করার জন্য যে তথ্যগুলি আপনার জানা দরকার, যেমন গ্রোথ অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল পোটেনশিয়াল, প্রিভিয়াস পারফরম্যান্স এবং আরও অনেক কিছু৷ সেগুলো সহজলভ্য না ও হতে পারে বা খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে।
Penny Stock Scams: পেনি স্টক স্ক্যামাররা একটি স্টক শর্ট সেল করে এবং তারপরে কোম্পানি সম্পর্কে গুজব ছড়িয়ে দেয়। ফলে দাম পড়ে যায়। এতে ক্ষতিটা বিনিয়োগকারীদেরই হয়। তাদের একটি লস করা স্টক ধরে রাখতে হয়। এত কিছু ঝুঁকি থাকার পরও আর্টিকেলের শুরুতে দুটি উদাহরণের কথা এখনও যদি মনে থাকে তাহলে দেখবেন দুটি ক্ষেত্রেই সবগুলো ছিল পেনি স্টক। আর দুই ক্ষেত্রেই মাল্টিব্যাগার হয়েছে স্টকগুলি। আর খবরের শিরোনামে এরকম পেনি স্টক মাল্টিব্যাগার হওয়ার খবর হামেশাই দেখা যায়।
কিন্তু আমার অনেকে মনে করছি এতে তো অনেক ঝুঁকি আছে। তা বলে কি যাব না? হ্যাঁ যাবেন। যদি ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে যেতে ইচ্ছা হয় তাহলে কিন্তু একটা জিনিস জানা দরকার যে পেনি স্টকে ইনভেস্ট করার আগে আমাকে কোন কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে?
Penny Stock এ ইনভেস্ট করার আগে কোন কোন বিষয় জানা উচিত?
তাই যদি আপনি একান্তই পেনি স্টক দিয়ে নিজের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ যাত্রা শুরু করতে চান তাহলে কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন।
প্রথমত: একবারে অনেকটা পরিমাণ অর্থ পেনি স্টকে বিনিয়োগ করবেন না। আপনার ইকুইটি পোর্টফোলিওর 10% এর বেশি যেন পেনি স্টক না থাকে অর্থাৎ যদি আপনার মোট ইনভেস্টমেন্ট পোর্টফোলিও হয় 10 লাখের যেখানে পাঁচ লাখের মতো আপনি স্টকে বিনিয়োগ করেছেন সেখানে ম্যাক্সিমাম আপনার 5 লাখের 10% অর্থাৎ 50 হাজার টাকা অবধি পেনি স্টক এ ইনভেস্ট করা যেতে পারে, তার বেশি নয়৷ মনে রাখবেন আপনি যতটা লস নিতে পারবেন ততটাই পেনি স্টক এ ইনভেস্ট করুন৷ পেনি স্টকের ক্ষেত্রে ডাইভার্সিফিকেশনের নিয়মটা খাটে না।
দ্বিতীয়ত: একাধিক কম মূল্যের স্টকে ইনভেস্ট করলে ভালো রিটার্ন আসার কোনও নিশ্চয়তা নেই। তাই পেনি স্টকে যদি ইনভেস্ট করতে হয় তাহলে একাধিক পেনি স্টকে বিনিয়োগ না করে দু তিনটি স্টকে বিনিয়োগ করতে পারেন। কারণ 10 – 12 টি লো প্রাইস স্টকের উপর নজর রাখার থেকে দু তিনটি স্টকে নজর রাখা সহজ।
তৃতীয়ত: পেনি স্টকে ইনভেস্টমেন্ট স্ট্র্যাটেজি পেনি স্টক কিন্তু লং টার্ম ইনভেস্টমেন্টের জন্য নয়, এটি একটি শর্ট টার্ম খেলা। অনেক বিনিয়োগকারী পেনি স্টকে বেশি সময় ধরে হোল্ড করে রাখেন। আর ওই সময়ের মধ্যে শেয়ারের দাম পড়ে যায়। তাই যে মুহূর্তে পেনি স্টকে বৃদ্ধি দেখা যাবে, সেই সময়ে এক্সিস নেওয়ার জন্য উপযুক্ত হবে বা অন্তত সেই সময় পার্শিয়াল প্রফিট বুক করতে পারেন। দীর্ঘ সময়ের জন্য হোল্ড করা উচিত নয় পেনি স্টকে।
চতুর্থত: আমরা দেখলাম পেনি স্টকের ভলিউম সাধারণত কম থাকে। পেনি স্টক ইনভেস্ট করার সময় এই জিনিসগুলি অবশ্যই নজরে রাখুন। যেমন ট্যাপার টুলস বলে একটি কোম্পানির শেয়ার বাজারে লিস্টেড রয়েছে, যেটি পেনি স্টক কোম্পানি গত ছয় মাসে কোম্পানিটির 38 টি শেয়ার গড়ে কেনাবেচা হয়েছে শেয়ার বাজারে অর্থাৎ যদি কোম্পানির বেশ কিছু সংখ্যক শেয়ার আপনার কাছে থেকে থাকে তাহলে সেগুলো বিক্রি করা বেশ কঠিন হবে। আর এটি মূলত বিডার্স রাইসের গ্যাপ বেশি হওয়ার কারণে।
পঞ্চমত: তাই পেনি স্টকে বিনিয়োগ করলে চেষ্টা করুন মোটামুটি হাই ভলিউম যুক্ত স্টক ইনভেস্ট করতে। যেখানে লিক্যুইডিটি বেশি। স্টকটি পাস্ট ভলিউম রেকর্ড দেখে নিন। গত এক মাসে স্টক ভলিউম কেমন ছিল দেখুন। ভ্যালু ইনভেস্টাররা স্টক কম দামে কিনে দাম বাড়লে প্রফিট করে কিন্তু পেনি স্টকে আপনি এই রোলটা অ্যাপ্লাই করতে পারবেন না। কোনও পেনি স্টক হয়তো আপনি পাঁচ টাকায় কিনেছেন দেখা গেল কিছু সময় পর সেটা কমে 3 টাকা হল, এই সময় নতুন স্টক কেনা একেবারেই উচিত নয় এবং দাম যদি আপনার লিমিটের অনেক নীচে নেমে যায় সে ক্ষেত্রে ইউজ লস আটকাতে অনেক সময় লস বুকিং করে তাতে ট্রেড করা উচিত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা দেখি পেনি স্টক থেকে প্রত্যাশিত ফল মেলে না। তবে এমন প্রচুর কোম্পানি উদাহরণও আছে যারা ভবিষ্যতে মাল্টিব্যাগার হয়েছে। তাই কোম্পানি সম্পর্কে যত বেশি তথ্য পাওয়া যায় সেগুলো মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। কম্পানির লিকুইডিটি কেমন সেটা দেখতে কোম্পানির মোট আউটস্ট্যান্ডিং শেয়ারের সংখ্যা দেখতে পারেন অর্থাৎ বাজারে লেনদেনের জন্য কোটি শেয়ার রয়েছে কোম্পানির। এছাড়াও কোম্পানিটি কী ধরনের ব্যবসা করছে, কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট কাদের হাতে রয়েছে। ফাউন্ডার কে, এই তথ্যগুলো ইন্টারনেটে সহজলভ্য।,এগুলো দেখে নিতে পারেন৷ সবশেষে এটাই বলা যায় স্বল্প দামের জন্য পেনি স্টক এর জনপ্রিয়তা থাকলেও এই স্টকের প্রচুর ঝুঁকিও রয়েছে।
সেই কারণেই এই ধরনের স্টকে বিনিয়োগের আগে কোম্পানি সম্পর্কে কিছু রিসার্চ প্রয়োজন অথবা ইনভেস্টমেন্ট এর আগে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজার এর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
তাই এই গেল পেনি স্টকের সম্পূর্ণ কাহিনী। পরিশেষে একটা কথা বলব পেনি স্টকে ততটাই ইনভেস্ট করবেন যতটা ইনভেস্টমেন্ট আপনার লস হয়ে গেলে আপনি সইতে পারবেন। আর এই আসা নিয়েও ইনভেস্ট করবেন না যে পেনি স্টক আপনার ভবিষ্যত বদলে দিতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে ইনভেস্ট করতে চাইলে ভারতের যেকোনো ভালো কোম্পানি ইনভেস্ট করুন, এতে আপনার ভালো হবে।
আজকের পোস্ট টি কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। শেয়ার বাজার সম্পর্কে খুটিনাটি বিষয় জানতে আমাদের সাইটি উপর রাখুন। আমরা চেষ্টা করব শেয়ার বাজার সম্পর্কে নতুন নতুন পোস্ট আপলোড করার। আজকের এই পর্যন্ত আবার দেখা নতুন কোনো পর্বে। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।